টঙ্গীতে স্ত্রীর চোখ তুলে নিল পাষণ্ড স্বামী

somokal
সমকাল প্রতিবেদক ও টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি | প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০১৫, ২২:৫৬:৩১
টঙ্গীতে এক গৃহবধূর দুই চোখ তুলে নিয়েছে পাষণ্ড স্বামী জুয়েল হাসান। মারাত্মক আহত গৃহবধূ শিউলি খাতুন বর্তমানে রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সহকারী রেজিস্ট্রার আতিকুল হক সাংবাদিকদের জানান, শিউলির দুই চোখের ভেতরে আর কিছু নেই। এখন শুধু চোখের অবয়ব আছে। অবস্থা খুব ভয়াবহ। চোখের নার্ভের সঙ্গে রয়েছে মস্তিষ্কের নিবিড় সম্পর্ক। হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ মিলে এই রোগীর ব্যবস্থা নিতে হবে। শনিবার  রোগীর চোখে অস্ত্রোপচার হতে পারে।

টঙ্গী থানার এসআই সুমন ভক্ত সমকালকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে টঙ্গীর জামাইবাজার এলাকার ভাড়া বাসায় স্বামী জুয়েল চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চোখ তুলে তার স্ত্রী শিউলিকে (৩৬) ভেতরে রেখেই বাসা তালাবদ্ধ করে চলে যায়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা পুলিশের সহায়তায় ঘরের তালা ভেঙে শিউলিকে উদ্ধার করেন।

টঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, এ ব্যাপারে টঙ্গী থানায় মামলা হয়েছে। জুয়েল ঘটনার পর থেকেই পলাতক। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

চিকিৎসাধীন শিউলি শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তার স্বামী ইয়াবা না কী জানি একটা খায়। ওই দিন (বৃহস্পতিবার) নেশার পরিমাণ বেশি হইছিল। স্বামী সারাক্ষণই ঘর, বাইর করে। তারপরও আমারে সন্দেহ করে। বলে ঘরে কে আসছিল? বলতে বলতেই আমার মুখে স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। পেছন দিকে দুই হাত এবং দুই পা বাইন্ধ্যা ফালায়। এক সময় বুঝি আমার চোখ নাই। তারপর  বেহুঁশ হইয়া যাই। এক সময় একটু জ্ঞান ফিরলে চারপাশে খালি অন্ধকার দেখি। হাতের বান্ধা একটু আলগা মনে হলে মুখ থেইক্যা স্কচটেপ টাইন্যা খুইল্যা চিৎকার দিই। আর কিছু মনে নাই।’

শিউলি খাতুন আরও জানান, পাঁচ বছর আগে তিনি জুয়েলকে বিয়ে করেন। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর  জানতে পারেন স্বামী নেশা করে। আগের স্বামীর কাছ  থেকে যে সম্পত্তি পাবেন, তা এনে দেওয়ার জন্য প্রায়ই তাকে মারধর করত জুয়েল। আর নেশার পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে তার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করত।

শিউলির ভাই রনি ঢাকায় গাড়ি চালান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, শিউলির আগের ঘরের এক  ছেলে ও এক  মেয়ে আছে।  মেয়েটা এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। বড়  ছেলেও পড়াশোনা করছে। তারা তাদের দাদার বাড়িতে থাকে।

শিউলির আগের স্বামী ২০০৯ সালে খুন হয়। এর এক বছরের মাথায় শিউলি তার স্বামীর চাচাতো ভাই জুয়েলকে বিয়ে করেন। এ বিয়েতে শিউলির বাবার পরিবার ও ছেলেমেয়েরা রাজি ছিল না। তাই সবার সঙ্গে তার একটা দূরত্ব  তৈরি হয়। তবে জুয়েলের এটি প্রথম বিয়ে। জুয়েল টঙ্গীতে ইট-বালুর ব্যবসা কর।

শিউলিকে উদ্ধারকারী প্রতিবেশী আলী আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, গত ১ অক্টোবর টঙ্গীর পহৃর্ব আরিচপুর এলাকার শিবলী ম্যানসনের নিচতলার ভাড়া বাসায় স্ত্রী শিউলী আক্তারকে নিয়ে ওঠেন জুয়েল হাসান। বাসায় আসার পর থেকেই তাদের (স্বামী-স্ত্রী) ঝগড়াঝাঁটির কারণে বাড়িওয়ালা ও অন্য ভাড়াটেরা অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। এ কারণে ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার মধ্যে জুয়েলকে বাসাও ছেড়ে দিতে বলা হয়। জুয়েল বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র: সমকাল, ০6 নভেম্বর ২০১৫

Leave a comment